মা কাত্যায়নীর কথা
Please Visit & Subscribe my Youtube Channel : Keleedas Kobita
ঋষি কাত্যায়নের কন্যা – দেবী কাত্যায়নী
অন্য নাম – মহাশক্তি, নবদুর্গা, পার্বতী, আদি পরাশক্তি
আবাস ঋষি কাত্যায়নের আশ্রম / শিবের পাদমূল
অস্ত্র – খড়্গ, খেটক, বজ্র, ত্রিশূল, বাণ, ধনুক, পাশ, শঙ্খ, ঘণ্টা ও পদ্ম
সঙ্গী – শিব
কাত্যায়নী হিন্দু দেবী দুর্গার একটি বিশেষ রূপ এবং মহাশক্তির অংশবিশেষ। তিনি নবদুর্গা নামে পরিচিত দুর্গার নয়টি বিশিষ্ট রূপের মধ্যে ষষ্ঠ। নবরাত্রি উৎসবের সময় তার পূজা প্রচলিত।
শাক্তধর্ম মতে, তিনি মহাশক্তির একটি ভীষণা রূপ এবং ভদ্রকালী বা চণ্ডীর মতো যুদ্ধদেবী রূপে পূজিতা। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, তার গাত্রবর্ণ দুর্গার মতোই লাল। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে রচিত পতঞ্জলির মহাভাষ্য গ্রন্থে তাকে মহাশক্তির আদিরূপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
কৃষ্ণ যজুর্বেদের অন্তর্গত তৈত্তিরীয় আরণ্যকে দেবী কাত্যায়নীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। স্কন্দ, বামন ও কালিকা পুরাণ অনুযায়ী, মহিষাসুর বধের নিমিত্ত দেবগণের অনুরোধে দেবী পার্বতী নিজের তেজ শক্তি তাদের দান করেন ও তাকে কায়া মূর্তি দিতে বলেন মহিষাসুর বর প্রাপ্ত ছিলো যে তাকে একমাত্র নারী মারতে পারবে যে মাতৃ গর্ভে জন্মাই নি তাই দেবী পার্বতী দেবগণের সহায়তাতে তামসি দেবী কে সৃষ্টি করেন সেই দেবী মহিষ অসুর বধ করেন। ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলে এই পৌরাণিক ঘটনাটির প্রেক্ষাপটেই বাৎসরিক দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
যোগশাস্ত্র ও তন্ত্র মতে, কাত্যায়নী আজ্ঞা চক্রের অধিষ্ঠাত্রী দেবী এবং এই বিন্দুতে মনোনিবেশ করতে পারলে তার আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
মা কালরাত্রী দক্ষিণ পাদপদ্ম দ্বারা বিরাট মৃগাধিপতিকে (সিংহ) অলঙ্কৃত করে বাম পদের অগ্রভাগ দ্বারা মহিষাসুরকে বিদলিত করছেন; যিনি সুপ্রসন্না ও সুন্দর বদনযুক্তা; যাঁর তিনটি নেত্রই মনোহর; যিনি হার, নূপুর, কেয়ূর ও জটামুকুটাদিতে শোভিতা; যাঁর পরিধানে বিচিত্র পট্টবস্ত্র এবং কপালে অর্ধচন্দ্র; যিনি সুকোমল দশ বাহুতে খড়্গ, খেটক, বজ্র, ত্রিশূল, বাণ, ধনুক, পাশ, শঙ্খ, ঘণ্টা ও পদ্ম ধারণ করে থাকেন; যাঁর দেহপ্রভা কোটি চন্দ্রের ন্যায়।
পৌরাণিক উপাখ্যান
প্রাচীন কিংবদন্তি অনুযায়ী, দেবী পার্বতী কাত্যবংশীয় ঋষি কাত্যায়নের কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করে কাত্যায়নী নামে পরিচিতা হন। মতান্তরে, কালিকা পুরাণে বলা হয়েছে, ঋষি কাত্যায়ন প্রথম দেবী পার্বতী পূজা করেন; তাই তিনি কাত্যায়নী নামে অভিহিতা হন। আবার, তিনি শিবের পত্নী পার্বতীররূপ বিশেষ রূপান্তর। নবরাত্রি উৎসবে তার পূজা প্রচলিত।
বামন পুরাণ গ্রন্থে দেবী কাত্যায়নীর উদ্ভবের কাহিনি বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে: “দেবগণ চরম দুরবস্থায় বিষ্ণুর নিকট সহায়তা প্রার্থনা করলে, বিষ্ণু ও তাঁর আদেশে শিব, ব্রহ্মা ও অন্যান্য দেবগন দেবী পার্বতীর অংশ নিয়ে তাকে কায়া রূপ দেন সকলের দেহ হতে দিব্য তেজ বিনির্গত হয়ে এক জ্যোতিপর্বতের সৃষ্টি করল। এই জ্যোতিপর্বত ধারণ করল দশভূজা, কৃষ্ণকেশী, ত্রিনয়না ও সহস্র সূর্যের প্রভাযুক্তা দেবী কাত্যায়নীর রূপ। শিব তাঁকে ত্রিশূল প্রদান করলেন। বিষ্ণু দিলেন সুদর্শন চক্র, বরুণ দিলেন শঙ্খ, অগ্নি দিলেন শক্তি, বায়ু দিলেন ধনুক, সূর্য দিলেন তীরভরা তূণীর, ইন্দ্র দিলেন বজ্র, কুবের দিলেন গদা, ব্রহ্মা দিলেন অক্ষমালা ও কমণ্ডলু, কাল দিলেন খড়্গ ও ঢাল এবং বিশ্বকর্মা দিলেন কুঠার ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র।
এইভাবে অস্ত্রসজ্জিতা হয়ে দেবী গেলেন বিন্ধ্যাচলে। দুই অসুরদ্বয় তাঁকে দেখে এবং তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাদের রাজা মহিষাসুরের নিকট দেবীর রূপ বর্ণনা করেন। মহিষাসুর দেবীকে লাভ করবার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। সে দেবীর পাণিপ্রার্থনা করে। দেবী জানান, তাঁকে লাভ করতে হলে তাঁকে যুদ্ধে পরাস্ত করতে হবে।
মহিষাসুর যুদ্ধ করতে এলে দেবী সিংহপৃষ্ঠে আরোহণ করে যুদ্ধ করেন। মহিষাসুর মহিষের রূপ ধরে দেবীকে আক্রমণ করলে, দেবী তাঁকে তীব্র পদাঘাত করেন। দেবীর পদাঘাতে মহিষাসুর অচৈতন্য হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে দেবী তার মস্তক ছিন্ন করেন। এইভাবে দেবী কাত্যায়নী মহিষাসুরমর্দিনী নামে অভিহিতা হন। বরাহ পুরাণ ও দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থেও এই কাহিনির উল্লেখ রয়েছে।
তন্ত্র অনুসারে, শিবের ছয় মুখের মধ্যে উত্তর মুখ থেকে দেবী কাত্যায়নীর উদ্ভব। এই মুখ নীলবর্ণ এবং ত্রিনয়ন। দক্ষিণাকালী, মহাকালী, গুহ্যকালী, শ্মশানকালী, ভদ্রকালী, একজটা, উগ্রতারা, তারিণী, ছিন্নমস্তা, নীল সরস্বতী, দুর্গা, জয়দুর্গা, নবদুর্গা, বাশুলী, ধূমাবতী, বিশালাক্ষী, গৌরী, বগলামুখী, প্রত্যাঙ্গীরা, মাতঙ্গী ও মহিষাসুরমর্দিনী দেবী এবং তাদের মন্ত্র ও পূজাপদ্ধতির উদ্ভবও হয় এই মুখ থেকেই।